Jan 25, 2019

গঙ্গাচওড়া শেখ হাসিনা সেতুতে চাঁদাবাজি



নিউজ ডেস্ক :: লালমনিরহাট-রংপুর সড়কে তিস্তা নদীর উপর সদ্য নির্মিত গঙ্গাচওড়া শেখ হাসিনা সেতু'তে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন থ্রিহুইলার ও অটোচালকরা।

অভিযোগে জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা ও রংপুরের গঙ্গাচওড়া উপজেলার সংযোগ স্থাপনে গঙ্গাচওড়া উপজেলার মহিপুর ও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা কাকিনা ইউনিয়নে 'গঙ্গাচওড়া শেখ হাসিনা সেতু' নির্মান করে সরকার। সেতুটির নির্মান কাজের তদারকি করেন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দফতর। গত বছরের শেষের দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টোল ফ্রি এ সেতুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনের পরে এ সেতু হয়ে হালকা যানবাহন চলাচল শুরু করে। সেতুটির উদ্বোধনের পর দুই জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নের দ্বাড় খুলে যায়। বেশী উপকৃত হয় লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলাসহ বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার মানুষ। এসব এলাকার ব্যাবসা বাণিজ্যের পথও সুগম হয়। লালমনিরহাট জেলার সকল রোগী ও রোগী বহনকারী যানবাহনগুলো দ্রুত সময়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌছতে এ রুটে যাতায়াত বেড়েছে।

ভাড়ি যানবাহনের অনুমতি না থাকায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ, থ্রিহুইলার ও অটো রিক্সার যাতায়াত বেশী। এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বাড়িতে খেয়ে অটো রিক্সায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বোরোবি)সহ রংপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া করছে। রোগীরাও অটো রিক্সায় যাতায়াত করছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফলে এ সড়কে থ্রিহুইলার ও অটোরিক্সার চাপ বেড়ে যায়।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর শ্রমিক নেতা শ্রমিক সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতি অটো রিক্সা ও থ্রি হুইলারে ১০/২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে গাড়ির চাবি বা ব্যবহৃত মোবাইল নেয়া হচ্ছে বলে চালকদের অভিযোগ। চাঁদা আদায় নিয়েও মারামারির ঘটনা ঘটছে চালকদের সাথে। চাঁদার এ অর্থ ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পুলিশের পকেটে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে প্রকাশ্য চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেও নিরব রয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ তুলছেন চালকরা। চালকদের দাবি লালমনিরহাট রংপুর দুই জেলা মিলে প্রায় ১৫ হাজার অটোরিক্সা ও থ্রি হুইলার এ রুটে নিয়মিত যাতায়াত করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির উত্তর পাড়ে প্রতিটি অটোরিক্সা ও থ্রি হুইলার আটকিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। মহিপুর কাকিনা সড়কের চেন মাষ্টার দাবি করে আরিফ নামে এক যুবক ভোর থেকে রাত অবধি চাঁদা আদায় করছেন।

জানতে চাইলে নিজেকে প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার লোক দাবি করে চেনমাষ্টার খ্যাত আরিফ বলেন, চালকদের কাছ থেকে আদায় করার টাকা নিজের মজুরী হিসেবে দৈনিক চারশত টাকা রেখে বাকী টাকা মসজিদ, মাদরাসায় দান করা হয়। এর বিনিময়ে এ রুটের অটোচালক চেন নিয়ন্ত্রন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার সেবা দেন বলে দাবি করেন তিনি।

এ রুটের অটোচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগনের সুবিধার জন্য সেতুটি নির্মান করেছেন। সেখানে চাঁদা না দিলে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়। মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়াসহ মারপিটের শিকার হতে হয়। প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দেন না কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চাঁদার টাকা পুলিশও পায়, তাই অভিযোগ দিয়ে কোন কাজ হয় না।

হাতীবান্ধা থেকে আসা ব্যাটারী চালিত ইজি-বাইকের চালক আব্দুর রহমান বলেন,প্রায় রোগী নিয়ে রংপুরে যাওয়ার সময় সেতুর উত্তর পাড়ে গাড়ী আটক করে দেয়। গাড়ী বদল করে রোগীকে যেতে বলে অথবা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে গাড়ীর চাবি অথবা টাকা পয়সা কেড়ে নেয়। এ জন দুর্ভোগ লাঘবে পুলিশ প্রশাসনের দ্রম্নত হসত্মক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম বলেন, ব্যবসার পন্য কিনতে অটোরিক্সা নিয়ে রংপুরে গেলে সেতুতে চাঁদা দিতে হচ্ছে। ফলে পন্য পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় চরম ভোগামিত্মও পেতে হচ্ছে সেতুর উত্তর পার্শেব।

বোরোবি'র শিক্ষার্থী বকুল ও সুমি জানান, প্রতিটি অটোরিক্সা আটকিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। চাঁদা না দিলে যাত্রীদের পায়ে হেঁটে সেতু পাড়াপাড় করতে হচ্ছে। এ পরিবহন নৈরাজ্য নিরসনে দ্রুত প্রশাসনের হসত্মক্ষেপ দাবি করেন তারা।

জানতে চাইলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মকবুল হোসেন বলেন, গঙ্গচওড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু কালীগঞ্জ থানা এলাকায় নয়। তাই এটি তার নিয়ন্ত্রনে বাহিরে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে রংপুরের গঙ্গাচওড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে সেতুর দুই পাড়ের শ্রমিকদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধামত্ম মতে এই চেনমাষ্টার আগামী ৭ দিন থাকবেন। এরপর এ নৈরাজ্য বন্ধ হয়ে সেতু পাড়াপাড় স্বাভাবিক হবে বলেও দাবি করেন তিনি।