অনলাইন ডেস্ক:: ৩শ' প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর একমাত্র ভরসা কালীগঞ্জ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠার পর পাঁচ ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিক্ষার আলো। প্রতিবন্ধী শিশুদের গড়ে তোলাই লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানটির।
প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে সাদা মনের কৃষক আবদুর রশিদ। ২০১১ সালে এই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি গড়ে তুলে সৃষ্টি করেছে আলোড়ন। তবে জাতীয়করণ না হওয়ায় তার একার পক্ষে বিদ্যালয় চলা হয়ে পড়েছে কষ্ট। কৃষক আবদুর রশিদের মতো প্রতিবন্ধীদের গড়ে তুলতে সমাজের সকলকে আসতে হবে এগিয়ে।
সরেজমিনে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রাম গিয়ে দেখা গেছে সকাল হলেই মেঠোপথ ধরে সারি সারি প্রতিবন্ধী শিশুর দল। কারো হাতে বই আবার কারো কাঁধে বই। কেউ বা আবার হুইল চেয়ারে বসেই ছুটছে তাদের একমাত্র ভরসা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। পশুরাম পাড়ার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা সমাজের বোঝা আর নয়। প্রতিদিন চোখেপড়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় যাওয়ার দৃশ্য। প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে আর বোঝা নয় তারাও করবে দেশকে জয়। বয়ে আনবে দেশের সুনাম। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও অন্য শিক্ষার্থীদের মতো নিজেদের করবে প্রতিষ্ঠিত।
প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষক আবদুর রশিদ। কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রাম পশুরাম পাড়ায় তার শেষ সম্বল একখণ্ড জমিতে গড়ে তুলেছে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে রয়েছে ৩ শতাধিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। কৃষক আবদুর রশিদ এর গড়ে তোলা কালীগঞ্জ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি ৩শ’ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর একমাত্র ভরসা। আবদুর রশিদের মতো সমাজের আরো অনেকেই পাশে দাঁড়াতে হবে প্রতিবন্ধীদের।
সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে জানা যায় লালমনিরহাট জেলায় তালিকাভুক্তি রয়েছে ১৬ হাজার ৪শ’ প্রতিবন্ধী আর তালিকার বাহিরে রয়েছে আরো ৪০ হাজারের বেশি প্রতিবন্ধী। এ সময় প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ১৬টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় তালিকা হলেও আরো প্রতীক্ষায় রয়েছে ১০টির বেশি বিদ্যালয়। এসব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া হলেও বিদ্যালয়গুলো এখনো হয়নি জাতীয়করণ। জাতীয়করণ না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ওদিকে কালীগঞ্জ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ।
জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. আসাদুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, ৪নং দলগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম খন্দকার, জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা ফরমান আলী, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক হারুন অর রশীদ, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুর রশীদ, সাংবাদিক শাহ্জাহান-সাজু, বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারী, অভিভাবক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রভাষক হারুন অর রশিদ বলেন, কালীগঞ্জ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায়, লেখাপড়ায় মনোযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিদ্যালয়টি। প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের শীতবস্ত্র বিতরণ, সাদা সড়ি, হুইল চেয়ার, বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধী বিষয়ক চিকিৎসা ভ্যান দিয়ে বাচ্চাদের চিকিৎসা করানোসহ নানান কর্মসূচি পালন করে আসছে।
বিদ্যালয়টিতে প্রতিবছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের শারীরিকভাবেও সচল রাখা তথা তাদের মেধা বিকাশের ব্যবস্থা করা, অন্ধ শিক্ষার্থীদের ইশারা ভাষায় ও ব্রেল দিয়ে পড়ালেখা শেখানোসহ বাচ্চাদের বিভিন্নভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। বিদ্যালয়টিতে ছাত্র/ছাত্রীরা ইতিমধ্যেই ৩টি সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রায় শতভাগ উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন ও সুনাম অর্জন করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুরা সমাজের চোখে বোঝা নয় তারা দেশকে জয় করছে, দেশের সুনাম বয়ে আনছে। এ বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও আরো ভালো কাজ করবে। লালমনিরহাট সমাজ সেবা উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর নীতিমালার কাজ শেষে বাকি পরিকল্পনার কাজ চলছে।